বাংলাদেশে শিল্পের শ্রেণীবিন্যাস।

বাংলাদেশের শিল্প কাঠামো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ‌ মূলধন বিনিয়োগ, শ্রমিক নিয়োগ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার প্রভৃতি দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিম্ন বর্ণিত কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় যেমন - বৃহৎ শিল্প, মাঝারি শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্প, অতি ক্ষুদ্র শিল্প, হাইটেক শিল্প, সংরক্ষিত শিল্প, অগ্রাধিকার শিল্প, নিয়ন্ত্রিত শিল্প। ‌ এই বিভিন্ন প্রকার শিল্প প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।


বাংলাদেশের শিল্প


১) বৃহৎ শিল্প :- বৃহৎ শিল্প বা বৃহদায়তন শিল্প বলতে বড় ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়। যে শিল্প কারখানায় বহুসংখ্যক শ্রমিক, অধিক মুলধন ও প্রচুর কাঁচামাল ব্যবহার করে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে বিপুল পরিমাণ দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন করা হয় তাকে বৃহৎ শিল্প বা বৃহদায়তন শিল্প বলা হয়। ‌ বাংলাদেশের শিল্প আইন অনুসারে, যে কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ২৩০ জনের অধিক তাকে বৃহৎ শিল্প বলে। বৃহৎ শিল্পে অধিক শ্রমিক ও মূলধন ছাড়াও উৎপাদন পদ্ধতিতে উন্নত প্রযুক্তি ও কলাকৌশল প্রয়োগ করা হয়। বাংলাদেশে পাট শিল্প, বস্ত্র শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, সার শিল্প, কাগজ শিল্প, চিনি শিল্প, লৌহ ও ইস্পাত শিল্প, প্রভৃতি বৃহৎ শিল্পের শ্রেণীভুক্ত।

২) মাঝারি শিল্প :- বাংলাদেশের কারখানা আইন অনুযায়ী, যে শিল্প কারখানায় ২০ জনের অধিক কিন্তু ২৩০ জনের কম শ্রমিক নিয়োগ করা হয় তাকে মাঝারি শিল্প বলে। ‌ বাংলাদেশে মাঝারি শিল্প সমূহ বৃহৎ শিল্পের ন্যায্য উৎপাদন ক্ষেত্র আধুনিক প্রযুক্তি ও কলা কৌশল ব্যবহার করে। তবে এই শিল্পে বৃহৎ শিল্প অপেক্ষা কম মূলধন নিয়োগ করা হয় এবং মূলধনের অনুপাতে অধিক শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। বাংলাদেশি মাঝারি শিল্প গুলো বৃহৎ শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্পের মাঝামাঝি পর্যায়ে অবস্থান করে। মাঝারি শিল্পের কিছুটা প্রসার ঘটলে তা বৃহৎ শিল্পের শ্রেণীভুক্ত হয়ে পড়ে। ‌ আবার মাঝারি শিল্পের সংকোচন ঘটলে তা ক্ষুদ্র শিল্পের শ্রেণীতে নেমে আসে। মাঝারি শিল্পে উৎপাদন ও সাংগঠনিক কাঠামো বৃহৎ শিল্পের তুলনায় কম কিন্তু ক্ষুদ্র শিল্পের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশের মাঝারি শিল্প সমূহের মধ্য উল্লেখযোগ্য হলো সাবান শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, নাইলন শিল্প, চামড়া শিল্প, দেশলাই শিল্প, সিগারেট শিল্প, প্রসাধনী শিল্প, কাঁচ শিল্প প্রভৃতি।


Read More :- সরকারি ব্যয়ের উদ্দেশ্য কি?


৩) ক্ষুদ্র শিল্প :- বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, যে শিল্প প্রতিষ্ঠানে দশ থেকে বিশ জন শ্রমিক নিয়োজিত থাকে এবং যার ২৫ লক্ষ টাকার কম স্থায়ী সম্পদ আছে এই ধরনের শিল্পকে ক্ষুদ্র শিল্প বলা হয়। ক্ষুদ্র শিল্পে সাধারণত ভাড়াটিয়া শ্রমিক নিয়োগ করা হয় এবং যান্ত্রিক শক্তি ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। ‌ বাংলাদেশের তাঁত শিল্প, রেশম শিল্প, কাসা ও পিতল শিল্প, বিড়ি শিল্প, লবণ শিল্প, প্রভৃতি ক্ষুদ্র শিল্পের শ্রেণীভুক্ত।


বাংলাদেশের শিল্প


৪) কুটির শিল্প :- বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, যে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে দশ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করে না এবং উৎপাদন কাজে নিয়োজিত এসব শ্রমিকের অধিকাংশই পরিবারের সদস্য যারা আংশিকভাবে বা পূর্ণভাবে শ্রমের যোগান দেয় এরূপ শিল্পকে কুটির শিল্প বলা হয়। কুটির শিল্পের মালিকরা নিজেরাই পুঁজি সরবরাহ করে এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে কোন যান্ত্রিক শক্তি বা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে না। সাধারণভাবে ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটির শিল্পের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। তবে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে, উভয়ের মধ্য বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পে সাধারণত ভাড়াটিয়া শ্রমিক নিয়োগ করা হয় এবং উৎপাদন কাজে বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করা হয়। পক্ষান্তরে, কুটির শিল্প পারিবারিক সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় না। ‌ তবে উভয় ক্ষেত্রে স্বল্প পুঁজি, কম শ্রমিক এবং সহজলভ্য কাঁচামালের সাহায্যে অল্প পরিমাণ দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে তাঁত শিল্প, মৃৎ শিল্প, বাঁশ ও বেত শিল্প, বিড়ি শিল্প, কাসা ও পিতল শিল্প, লবণ শিল্প প্রভৃতি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের শ্রেণীভুক্ত।

৫) হাইটেক শিল্প :- হাইটেক শিল্প বলতে জ্ঞান ও পুঁজি নির্ভর উচ্চ প্রযুক্তিভিত্তিক পরিবেশবান্ধব এবং আইটি বা গবেষণা ও উন্নয়ন নির্ভরশিল্প কে বোঝায়।

৬) সংরক্ষিত শিল্প :- সরকারি নির্দেশের মাধ্যমে যেসব শিল্প, শিল্প জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সংরক্ষিত রাখা প্রয়োজন এবং যেসব শিল্প স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল হিসেবে সরকারি বিনিয়োগে জন্য সংরক্ষিত সেই সব শিল্পকে সংরক্ষিত শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ‌ সংরক্ষিত শিল্প হল - অস্ত্রশস্ত্র সামরিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি, পারমাণবিক শক্তি, সিকিউরিটি প্রিন্টিং ও টাকশাল, বনায়ন ও সংরক্ষিত বনভূমির সীমানায় যান্ত্রিক আহরণ।


বাংলাদেশের শিল্প


৭) অগ্রাধিকার শিল্প :- অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত শিল্প বলতে যে সমস্ত উদীয়মান শিল্পকে বোঝাবে যে সমস্ত শিল্পের প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি সহ দারিদ্র বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও পেষণা প্রদানের মাধ্যমে পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সরকার কর্তৃক একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অগ্রাধিকারমূলক নীতি সমর্থন যোগানো প্রয়োজন হয়। এখানেও তিনটি শিল্প রয়েছে।


Read More :- মুদ্রাস্ফীতির শ্রেণীবিভাগ এবং সূচক সংখ্যা।


৮) নিয়ন্ত্রিত শিল্প :- প্রাকৃতিক বা খনিজ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে দেশের স্বার্থে সেবামূলক বিনোদনমূলক কিছু শিল্প স্থাপনের বিষয়ে সরকার যথেষ্ট সিদ্ধান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ কল্পে এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও সংস্কৃতির প্রতি হুমকির কারণ হতে পারে বা অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন সকল শিল্প সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অনুমোদন গ্রহণ সাপেক্ষে বেসরকারি খাতে স্থাপন করা যাবে। সরকার পরিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা নিয়ে নিয়ন্ত্রিত শিল্পের তালিকা তৈরি করে।

Post a Comment

0 Comments