ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের উৎসসমূহ।

কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে ওদের প্রয়োজনে তা বিভিন্ন উৎস হতে সংগৃহীত হয়। এই উৎসগুলো প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় অভ্যন্তরীণ উৎস এবং বাহ্যিক উৎস। অভ্যন্তরীণ উৎস বলতে বোঝায়, কোন ব্যক্তি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব সম্পদ হতে যে অর্থসংস্থান করা হয় তাকে অভ্যন্তরীণ উৎস বলা হয়। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্য উল্লেখযোগ্য হল, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকের নিজস্ব সঞ্চয়, কোম্পানির অ-বন্টিত মুনাফা, অবচয় তহবিল ইত্যাদি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অধ্যয়নের অভ্যন্তরীণ উৎসগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।


Funding


১) নিজস্ব সঞ্চয়:- ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের প্রধান নির্ভরযোগ্য উৎস হল মালিকের নিজস্ব সঞ্চয়। কোন ব্যক্তি তার চলতি আয়ের সবটাই ভোগের জন্য ব্যয় করে না। সে তার জলদি আয় থেকে প্রতিমাসে কিছু না কিছু সঞ্চয় করে। এই সঞ্চয় থেকেই মূলধনের সৃষ্টি হয় যা পরবর্তীতে শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়। সুতরাং কোন মালিকের নিজস্ব সম্পদ বা নিজস্ব সঞ্চয় হলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের প্রাথমিক উৎস।

২) অ-বন্টিত মুনাফা:- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল কোম্পানির অ-বন্টিত মুনাফা। কোন প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের পুরোটাই মালিকদের মত বন্টন করা হয় না। প্রতিষ্ঠানের অপ্রত্যাশিত বা জরুরি ব্যয় মেটানো, দীর্ঘমেয়াদী ঋণ পরিষদের জন্য নিমজ্জমান তহবিল গঠন, পেনশন তহবিল গঠন প্রভৃতি উদ্দেশ্যে চলতি মুনাফার একটি অংশ অংশীদার বা শেয়ার হোল্ডারদের মধ্য বন্টন না করে রেখে দেওয়া হয়। একে সংরক্ষিত তহবিল বা অ-বন্টিত মুনাফা বলা হয়। এই অ-বন্টিত মুনাফা বা সংরক্ষিত মুনাফার অংশ বিশেষ ব্যবসায়ের উন্নয়নকল্পে ব্যয় করা হয়। এটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস।


Read More :- শেয়ার কী এবং এর প্রকারভেদ।


৩) অবচয় তহবিল:- ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল অবচয় তহবিল। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বৃহদায়য়তন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করতে হয়। এজন্য একসাথে প্রচুর অর্থে প্রয়োজন হয়। তাই নতুন সম্পদ ক্রয়ের বছরে সম্পত্তির মোট ক্রয় মূল্যকে মোট আয়ুস্কালের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিবছর সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি বাবদ কিছু পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠানের লাভ লোকসানের হিসেবে ডেবিট করে রাখা হয়। ‌ এরূপ অর্থ কর্তন কে অবচয় বলা হয়। এভাবে সৃষ্ট অবচয় তহবিল থেকে প্রতিষ্ঠানের অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।


Funding


ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে যৌথ মূলধনী কারবারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য অভ্যন্তরীণীয় সম্পদ বা নিজস্ব সম্পদের বাইরে মুলতান বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। একে অর্থসংস্থানের বাহ্যিক উৎস বলা হয়। নিম্নে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের বাহ্যিক উৎস নিয়ে আলোচনা করা হলো:-

১) শেয়ার মার্কেট:- যখন কোন কোম্পানির প্রচুর মূলধনের দরকার হয় তখন সেই কোম্পানির মূল্যকে শেয়ার হিসেবে ভাগ করে শেয়ার মার্কেটে সেই ক্ষুদ্র শেয়ার গুলো বিক্রয় করা হয় এবং এটি মাধ্যমে কোম্পানিগুলো প্রচুর অর্থ পেয়ে থাকে। তবে কোম্পানির অন্যদের কাছে বিক্রয় করলে কোম্পানির প্রচুর মালিক তৈরি হয় এর ফলে কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু জটিলতার শর্তেও শেয়ার মার্কেটের মাধ্যমে একটি কোম্পানি প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারে এবং এই অর্ধেক দ্বারা কোম্পানিকে আরো বৃহৎভাবে গড়ে তোলা সম্ভব তাই কোম্পানির অর্থায়নের জন্য শেয়ার মার্কেট একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।


Read More :- Public - Private Partnership কী এবং এর বৈশিষ্ট্য।


২) বন্ড বা ঋণপত্র:- যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের অন্যতম উৎস হল বন্ড বা ডিবেঞ্চার বিক্রয়। যখন শেয়ার বিক্রয় মাধ্যমে কোম্পানির প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা যায় না তখন কোম্পানি বন্ড বা ডিবেঞ্চার বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। বন্ড বা ডিবেঞ্চার হল একটি চুক্তিবদ্ধ ঋণপত্র যাতে ঋণগ্রহীতা দ্বারা ঋণদাতাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট সুদের হারে সুদসহ মূলধন ফেরৎ প্রদানে বাধ্য থাকে। কোম্পানির লাভ বা লোকসান যায় হোক না কেন বন্ডে মালিক নির্দিষ্ট হারে সুদ পেয়ে থাকে। যারা অর্থ বিনিয়োগ করে কোন ঝুঁকি নিতে চায় না তারা সাধারণত বন্ড বা ডিবেঞ্চার ক্রয় আগ্রহী হয়। বন্ড বা ডিবেঞ্চার বিক্রয় মাধ্যমে যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠান তাদের দীর্ঘমেয়াদী অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করে।


Funding


এভাবে বিভিন্ন উপায়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ সংগ্রহ করে। এবং একটি কোম্পানির ভবিষ্যতের জন্য এই অর্থ গুলো বিনিয়োগ করা হয়। এবং কোম্পানিকে প্রসার করার জন্য এটি অনেক সাহায্য করে তাই প্রত্যেকটি কোম্পানি বিভিন্ন উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের বিভিন্ন উপায় রয়েছে যেমন নিজস্ব সঞ্চয়, শেয়ার বাজার, বন্ড ইত্যাদি। এর মধ্য সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হচ্ছে নিজস্ব সঞ্চয়। কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পূর্ববর্তী মুনাফা থেকে যদি ব্যবসা বিস্তারের চেষ্টা করা হয় তাহলে এই খরচ নিয়ে বেশি মানুষকে জবাবদিহি করতে হয় না কারণ এটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয় করা অর্থ। কিন্তু শেয়ার বাজারে কোম্পানির শেয়ার বিক্রয় করে অর্থ সংগ্রহ করলে সেই শেয়ারের মালিক হিসেবে প্রত্যেক শেয়ারহোল্ডারকে বিস্তার সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হয় যার ফলে ব্যবসাকে বিস্তার করায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়। সুতরাং এই ভাবেই একটি ব্যবসার বিস্তার করা সম্ভব। একটি ব্যবসা বিস্তারের জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নতুন একটি প্রোডাক্ট বের করলে মার্কেটে সেটি টেস্ট করা, বিজ্ঞাপনের পেছনে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করা, প্রোডাক্ট তৈরির জন্য বিভিন্ন শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। সুতরাং এই অর্থ যদি কোম্পানির কাছে পূর্ববর্তী মুনাফা হিসেবে থেকে থাকে তাহলে কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে প্রোডাক্টটিকে বিস্তার করার জন্য। আর কোম্পানির কাছে যদি অর্থের সংকট থাকে তাহলে শেয়ার মার্কেট থেকে অথবা বন্ড বিক্রয় করে কোম্পানিকে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করতে হয়। এবং সেই অর্থের মাধ্যমে কোম্পানিকে আরো বিস্তার করতে হয়  তারপর সেটি থেকে অর্জিত মুনাফার মাধ্যমে কোম্পানি ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যেতে পারে।

Post a Comment

0 Comments