শেয়ার কী এবং এর প্রকারভেদ।

যৌথ মূলধনী কারবারে মূলধন সংগ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো শেয়ার বিক্রয়। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধনকে কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমান অংশে বিভক্ত করা হয়। বিভাজিত এক একটি অংশকে শেয়ার বলে। আচারাই শেয়ার ক্রয় করে তাদেরকে শেয়ারহোল্ডার বলা হয়। যৌথ মূলধনী কারবারের প্রয়োজনীয় মূলধন প্রধানত শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।  কোম্পানি আইন অনুসারে শেয়ারহোল্ডারাই হলেন কোম্পানির প্রকৃত মালিক।


শেয়ার বাজার


নিচে শেয়ারের কিছু বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো:-

১) মালিকানা:- শেয়ারহোল্ডারগণ‌ই হলেন কোম্পানির প্রকৃত মালিক। যারা কোম্পানি শেয়ার ক্রয় করেন তারা আলাদা আলাদাভাবে কোম্পানির মালিকের মর্যাদা লাভ করেন।

২) লাভ-লোকসানের অংশীদার:- শেয়ারহোল্ডারগণ‌ই কোম্পানির লাভ লোকসানের অংশীদার। শেয়ারহোল্ডারগণ‌ই কোম্পানির মালিক বিধায় কোম্পানির লাভ বা মুনাফা হলে তারা শেয়ারের অনুপাতে লভের অংশ পায় তেমনি কোম্পানির লোকসান হলে শেয়ারের অনুপাতে লোকসানের ভাগ‌ও বহন করতে হয়।

৩) পরিচালনায় অংশগ্রহণ:- শেয়ারহোল্ডারগণ‌ই পরোক্ষভাবে কোম্পানির পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে থাকে। কারণ, তাদের ভোটের মাধ্যমে পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হন। আর এই পরিচালনা সদস্যরা কোম্পানির কার্যাবলী পরিচালনা করেন।

৪) ভোটাধিকার প্রয়োগ:- সিরাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সাধারণ শেয়ারহোল্ডারগণ কোম্পানির পরিচালনায় ভোটের অধিকার ভোগ করেন। কোম্পানির বার্ষিক সরকার ভোট দানের মাধ্যমে কোম্পানির পরিচালনা ও নীতি নির্ধারণে ভূমিকা পালন করেন।


Read More :- সরকারি ঋণ এবং সরকারি ঋণের উদ্দেশ্য কি?


৫) সীমাবদ্ধ দায়:- স্যারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল যে, শেয়ারহোল্ডারগণ‌ই কোম্পানির সীমাবদ্ধ দায় বহন করে। কোম্পানির লাভ হলে শেয়ার হোল্ডারগন যেমন শিয়ালের অনুপাতে লাভের অংশ ভোগ করেন তেমনি কোম্পানির লোকসান হলে শেয়ারহোল্ডারগণ‌কেই তাদের শেয়ারের অনুপাতে লোকসান বা ক্ষতির অংশগ্রহণ করতে হয়। এই কারণে শেয়ারহোল্ডারগণদের ঝুঁকি বা দায় অনেকটাই সীমাবদ্ধ।


শেয়ার বাজার


সংক্ষেপে বলা যায়, শেয়ার হলো পুঁজিবাজারে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। পুঁজিবাজারে শেয়ার ক্রয় এবং বিক্রয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থই হলো যৌথ মুলতানি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের প্রধান উৎস।

শেয়ারের প্রকারভেদ সম্পর্কে নিজে আলোচনা করা হলো।

যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের প্রধান উৎস হলো শেয়ার। পুঁজিবাজারে শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে যৌথ মূলধনী কারবারের অর্থ সংগৃহীত হয়। পুঁজিবাজারে বিক্রীত শেয়ার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। শেয়ারের প্রকারভেদ সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা করা হলো:-

১) সাধারণ শেয়ার:- কোম্পানির অনুমোদিত মূলধনকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে বিভাজিত অংশসমূহ কে পুঁজিবাজারে শেয়ার হিসেবে ক্রয় বিক্রয় করা হয়। শেয়ারের মালিকদের শেয়ার হোল্ডার বলা হয়। সাধারণ শেয়ারের মুনাফা কোন নির্দিষ্ট থাকেনা। বছর শেষে কোম্পানির সব দেয় দেনা পরিষদের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাই হল কোম্পানির নিট মুনাফা। এই মুনাফায় সাধারণত শেয়ার হোল্ডারদের মধ্য তাদের শেয়ারের মূল্যের অনুপাতে বন্টন করা হয়। তবে কোম্পানির সব দায় দেনা পরিষদের পর যদি কোম্পানির লোকসান বা ক্ষতির সম্মুখীন হয় তাহলে সাধারণ শেয়ারের মালিকদের তা বহন করতে হয়। অর্থাৎ সাধারণ শেয়ারের মালিকদের কে কোম্পানির ঝুঁকি বহন করতে হয়। সাধারণ শেয়ারের মালিকরাই কোম্পানির পরিচালনা পরিশোধ গঠন ও অন্যান্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভোট প্রদানের অধিকার ভোগ করে। সাধারণ শেয়ারের মালিকরাই কোম্পানির মূল মালিক।

২) অগ্রাধিকার শেয়ার:- যৌথ মূলধনী কারবারে অর্থায়নের আরেকটি উৎস হল অগ্রাধিকার শেয়ার ক্রয় বিক্রয়। অগ্রাধিকার শেয়ারের বৈশিষ্ট্য হলো যে, এসব শেয়ারের মালিকদেরকে একটি নির্দিষ্ট হারে মুনাফা প্রদান করা হয়। সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের পূর্বেই অগ্রাধিকার শেয়ার হোল্ডারদের মুনাফা প্রদান করতে হয়। অগ্রাধিকার শেয়ার হোল্ডারদের ঝুঁকির পরিমাণ খুবই কম। কোম্পানির কোন লাভ না হলে ওই মুহূর্তে তাদের কোন লভ্যাংশ দেওয়া হয় না। তবে পরবর্তীতে কোম্পানির লাভ হলে পূর্ববর্তী বছর এবং চলতি বছরে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ একসাথে প্রদান করতে হয়। অগ্রাধিকার শেয়ারের মালিকরা কোম্পানির প্রকৃত মালিক নয় এবং তাদের কোন ভোটাধিকার থাকে না। তারা কেবল অধিকারভিত্তিতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের আগেই নির্দিষ্ট হলে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে।


শেয়ার বাজার


৩) গ্রীন ফিল্ড শেয়ার:- যে কোম্পানি পরিকল্পনাধীন আছে এবং এখনো ব্যবসা শুরু করেনি তাকে গ্রীন ফিল্ড কোম্পানি বলে। এ ধরনের কোম্পানির ইস্যুকৃত শেয়ারকে গ্রীন ফিল্ড শেয়ার বলা হয়।

৪) প্রাথমিক শেয়ার:- কোন কোম্পানি যখন বাজারে প্রথম শেয়ার বিক্রয় করে তখন ঐ শেয়ারকে প্রাথমিক শেয়ার বলা হয়।

৫) সেকেন্ডারি শেয়ার:- প্রাথমিক শেয়ারের মালিক পরবর্তীতে পুঁজিবাজারে ওইসব শেয়ার পুনরায় বিক্রি করে। এসব শেয়ারকে সেকেন্ডারি শেয়ার বলা হয়।


Read More :- কর কাকে বলে এবং প্রত্যক্ষ কর ও পরোক্ষ কর কী?


একটি নতুন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির জন্য শেয়ার মার্কেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন কোন কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হলে সেই কোম্পানি বিস্তারের জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় কিন্তু বেশিরভাগ নতুন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির জন্যই অর্থ সংগ্রহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায়। আর এই কারণেই শেয়ার মার্কেটে গুরুত্ব অপরিসীম। শেয়ার মার্কেটের মাধ্যমে কোম্পানির বিস্তারের জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে কোম্পানিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

পুঁজিবাজার :- যে বাজারে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের লেনদেন হয় তাকে মূলধন বাজার বা পুঁজিবাজার বলা হয়। যৌথ মূলধনী করবারসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঋণ বা মূলধনের প্রয়োজন হয়। যে বাজার থেকে স্বল্পমেয়াদী ঋণ সংগ্রহ করা হয় তাকে মুদ্রা বাজার বলা হয়। পক্ষান্তরে, যে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কারবার হয় তাকে পুঁজিবাজার বলা হয়। যৌথ মূলধনী কারবারে শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার এবং দীর্ঘমেয়াদি সরকারি ঋণপত্র ইত্যাদি হল পুঁজিবাজারের মূল উপাদান। যৌথ মূলধনী কারবারের শেয়ার এবং অন্যান্য ঋণপত্র বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মূলধন বা পুঁজি সংগ্রহীত হয়। পুরীর বাজার যত উন্নত ও শক্তিশালী হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অতএব প্রক্রিয়া তত সহজ গতিশীল হয়। পুঁজিবাজার হল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন হয় কিন্তু এত বিশাল পরিমাণ অর্থ একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে সব সময় থাকে না সেজন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে প্রচুর পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন হয় এবং এই অর্থের প্রয়োজন মেটাতে পুঁজিবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা যেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কিছু শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব। এবং এই অর্থ সংগ্রহ করে একটি কোম্পানি বিস্তার লাভ করতে পারে এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে এবং যার মাধ্যমে দেশটাকে বেকারত্ব দূর হতে পারে। সুতরাং আমাদের অর্থনীতির জন্য পুঁজিবাজার এর গুরুত্ব অপরিসীম। একটি কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ভালো থাকলে বিনিয়োগকারী অবশ্যই সেই ধরনের কোম্পানিতে নিবেশ করে থাকে সুতরাং একটি ভালো কোম্পানির অর্থ সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

Post a Comment

0 Comments