Public - Private Partnership কী এবং এর বৈশিষ্ট্য।

দেশের শিল্পায়নের ভিত্তি মজবুত করা এবং অর্থনীতির অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে সরকার সম্প্রতিকালে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সমন্বয় এক নতুন নীতিমালা গ্রহণ করেছে। এটি সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব নামে পরিচিত। সংক্ষেপে একে PPP বলা হয়। সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নে পৃথকভাবে সংগৃহীত প্রকল্প সমূহের বাইরে বিশেষ করে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে সংগৃহীত একটি নতুন কৌশল। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে উন্নয়ন ধারাকে উচ্চতার স্তরে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যৌথ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনা সমূহ বাস্তবায়নের জন্য নতুন এর শিল্পনীতি গ্রহণ করা হয়েছে।


Public - Private Partnership


Public Private Partnership এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১) ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ:- PPP - এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দেশের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ। দেশের অর্থনীতিক ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন। তাই PPP এর মাধ্যমে দেশে রাস্তাঘাট, সড়ক ও সেতু, রেলপথ নির্মাণ পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করাই হল PPP এর প্রধান লক্ষ্য।

২) সেবা খাতের উন্নয়ন:- PPP অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল দেশের সেবা খাতের উন্নয়ন ঘটানো। PPP এর মাধ্যমে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংক ও বীমা খাতের উন্নয়নে অবদান রাখা।

৩) শিল্প খাতের পর্যাপ্ত পুঁজি সরবরাহ:- বাংলাদেশে ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে পুঁজির স্বল্পতার কারণে অনেক সময় সরকারি ও বেসরকারি খাতে পৃথকভাবে অর্থায়ন সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি অংশদারীত্বের ভিত্তিতে শিল্প খাতের প্রকল্পের বাস্তবায়ন করে।

৪) বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি:- PPP এর মাধ্যমে দেশের শিল্প ক্ষেত্রে তিনি ওকে পরিবেশ আরো বৃদ্ধি পাবে। সরকারি বিনিয়োগ ও বেসরকারি বিনিয়োগের মধ্য অসুস্থ প্রতিযোগিতার অবসান ঘটিয়ে দেশে বিনিয়োগের একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হবে।




৫) যৌথভাবে বিনিয়োগের ঝুঁকি বহন:- PPP এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো যৌথভাবে বিনিয়োগ ঝুকি বহন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগে অন্যতম সমস্যা হল ঝুঁকিবহনের অক্ষমতা। অভিজ্ঞতা অভাবে বাংলাদেশে বিশেষ করে বেসরকারি খাতে উদ্যোক্তারা নতুন শিল্প স্থাপনে সাহসী ভূমিকা নিতে পারে না। সরকারি বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পে বিনিয়োগ সম্ভব হয়।


Public - Private Partnership



৬) বেসরকারি খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি:- PPP এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বেসরকারি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি। PPP এর মাধ্যমে শিল্প কারখানা স্থাপ ন করা হলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং শিল্পায়নের গতি তুরান্বিত হয়।

৭) কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি:- PPP এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ফলে দেশে কর্মসংস্থানে সুযোগ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়।

৮) মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রা মান উন্নয়ন:- PPP এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। PPP এর মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায় এবং তাদের জীবনযাত্রার মান ও উন্নত হয়।

৯) দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ:- PPP এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ। PPP এর আওতায় সে সমস্ত প্রকল্প গ্রহণ করা হয় সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদী হয়। এসব প্রকল্প সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ বছর মেয়াদী হয়। PPP এর মাধ্যমে দেশে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন কাঠামো সৃষ্টি করা সম্ভব হয়।




১০) টেকসই উন্নয়ন:- PPP এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো টেকসই উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি করা। দীর্ঘমেয়াদী ও অবকাঠামো গত প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশে টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করাই PPP এর মূল উদ্দেশ্য।


Public - Private Partnership



একটি দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য সব সময় সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ থাকে না। এর ফলে অনেক প্রকল্পের কাজ শুরু করো সম্ভব হয় না। এতে দেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি হয় এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ না থাকলে যখন সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এবং একটি পার্টনারশিপ করে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উভয় সমান ঝুঁকি নিয়ে কোন প্রকল্পতে বিনিয়োগ করে তখন তাকে Public Private Partnership বলা হয়। এই ধরনের পার্টনারশীপে সুবিধা হল সরকারের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলেও সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থ নিতে পারে এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে কাজ করতে পারে এর ফলে কোন প্রকল্পে বাধা সৃষ্টি হয় না এবং দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যেতে থাকে। তাই এই ধরনের প্রকল্প গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলো কিভাবে আরো সহজে এই ধরনের প্রকল্প করতে পারে সেদিকে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। এতে করে আরো সহজ ভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন সম্ভব হবে এতে করে দেশের উন্নতি হবে এবং জনগণের কল্যাণ হবে।

উপসংহারের বলা যায় যে, Public - Private Partnership একটি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটির মাধ্যমে সরকারের কাছে কোন প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে সরকার কোন প্রাইভেট কোম্পানিকে প্রকল্পে যোগ করতে পারে এবং অর্থ সংগ্রহ করতে পারে এর মাধ্যমে কোন প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্থ হয়ে থাকে না। বহু প্রাইভেট কোম্পানি আছে যারা সরকারের সাথে মিলে উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চাই। কিন্তু অনেক সময় বিভিন্ন বাঁধার কারণে তাদের বিনিয়োগ করতে অনেক ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয় যার ফলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। ‌ সুতরাং সরকারকে এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে যে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো যেন সরকারের সাথে বিনা অসুবিধায় সহজ ভাবে কাজ করতে পারে। এভাবে একটি দেশে সরকারের অর্থ সংকট কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব এবং প্রকল্পগুলোতে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো যুক্ত হলে সরকারের সরকারের আধিপত্য অনেকটা কমে যায়। সুতরাং একটি উন্নয়নশীল দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য Public - Private Partnership অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি মাধ্যমে কোন প্রকল্পে দেশের সরকার সহ দেশের নামিদামি এবং বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত হয়ে থাকে।

Post a Comment

0 Comments