মুদ্রাস্ফীতির শ্রেণীবিভাগ এবং সূচক সংখ্যা।

চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি, প্রকৃতপক্ষে পূর্ণ নিয়োগের প্রেক্ষিতে বা বিদ্যমান সম্পদ, প্রযুক্তি ও দক্ষতার প্রেক্ষিতে সামগ্রিক যোগান স্থির থেকে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পেলে বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে। তখন শ্রমের দক্ষতা, যোগান, উৎপাদন কৌশল, উৎপাদন ব্যয় প্রভৃতি স্থির অবস্থায় দ্রব্য সামগ্রী চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দামস্তর‌ও বৃদ্ধি পায়। এরূপভাবে বৃদ্ধির প্রবণতায় হলো চাহিদা বৃদ্ধি জনিত মুদ্রাস্ফীতি।


মুদ্রাস্ফীতি


ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি, উৎপাদনের উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি যেমন, শ্রমের মূল্য-মজুরি, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতির মূল্য, পরিবহন ব্যয় ইত্যাদি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এ সময় উৎপাদক আগে সমান ব্যয় করে আগের সময় দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে না, তখন উৎপাদন কমে যায়। হঠাৎ বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের দামস্তর বৃদ্ধিকে ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে। অর্থাৎ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সামগ্রিক যোগান হ্রাস পেলে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায় এ ধরনের দাম বৃদ্ধিকে ব্যয় বৃদ্ধি জনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে।

সূচক সংখ্যা :- অর্থের মূল্য পরিবর্তন পরিমাপ করার জন্য যে বিশেষ সংখ্যা বাচক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তাকে সুযোগ সংখ্যা বা ইনডেক্স নাম্বার বলে। অর্থের মূল্য বা ক্রয় ক্ষমতা পণ্য সামগ্রীর দামের উপর নির্ভর করে। ‌ অর্থের বিনিময় কি পরিমান দ্রব্য সামগ্রী পাওয়া যায় তা নির্ভর করে দামস্তরের উপর। সমাজে সব দ্রব্য সামগ্রীর দাম একই সাথে বাড়ে না বা কমে না। কাজেই অর্থের মূল্য নির্ণয় করতে হলে কতগুলো দ্রব্যসামগ্রীর একটি গড় দাম বের করা প্রয়োজন। ‌ কোন বিশেষ সময়ে নির্দিষ্ট কতগুলো দ্রব্যসামগ্রীর দামের গড়কে দামস্তর বলে। বিভিন্ন সময়ের দামস্তরগুলো পাশাপাশি সাজালে সূচক সংখ্যা পাওয়া যায়। ‌ অর্থের মূল্য পরিবর্তন পরিমাপ করার জন্য বিশেষভাবে সাজানো এই মূল্য স্তরের সমষ্টিকে সুযোগ সংখ্যা বলে। এটি অর্থের মূল্য পরিবর্তন পরিমাপ করার একটি সংখ্যাবাচক পদ্ধতি। সূচক সংখ্যা গঠনের প্রক্রিয়ায় কতগুলো বিষয় বিবেচনা করতে হয়। এই বিষয়গুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।


Read More :- মুদ্রাস্ফীতি কি সর্বদাই খারাপ?


১) ভিত্তি বছর নির্বাচন :- সূচক সংখ্যা গঠন করতে হলে প্রথমে একটি ভিত্তি বছর বা মূল বছর নির্বাচন করতে হয়। ভিত্তি বছরের মূল্যস্তরের সাথে তুলনা করে অন্যান্য বছরের দ্রব্যমূল্যের পরিবর্তন পরিমাপ করা হয়। ভিত্তি বছর নির্বাচন করার সময় যথাসম্ভব স্বাভাবিক একটি বছর নির্বাচন করতে হবে। স্বাভাবিক বছর বলতে এখানে এমন একটি বছরকে বোঝানো হয় যা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্থিতিশীল। যুদ্ধকালীন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ কোন অস্বাভাবিক বছরকে ভিত্তি বছর হিসাবে নির্বাচন করা হয় না। সুতরাং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মোটামুটি স্থিতিশীল এমন একটি স্বাভাবিক বছরকেই ভিত্তি বছর হিসাবে নির্বাচন করা হয়। যদি এরূপ কোন স্বাভাবিক বছর না পাওয়া যায় তাহলে পরপর কয়েকটি বছর বছরের গড়কে ভিত্তি বছর হিসাবে ধরতে হয়।


মুদ্রাস্ফীতি


২) হিসাবি বছর নির্বাচন :- যে বছরের দ্রব্যমূল্যের সাথে ভিত্তি বছরের দ্রব্যমূল্যের পরিবর্তন তুলনা করা হয় তাকে হিসাবি বছর বলা হয়। এ বছরটি সাধারণত চলতি বছর বা নিকট বর্তমানের কোন বছর ধরতে হয়।

৩) দ্রব্য নির্বাচন :- সূচক সংখ্যা গঠনের জন্য এই পর্যায়ে কতগুলি প্রয়োজনীয় দ্রব্য নির্বাচন করতে হয়। এই দ্রব্যগুলো যত সম্ভব প্রতিনিধিত্বমূলক দ্রব্য হওয়া উচিত। মানুষ বাস্তবে অসংখ্য দ্রব্য ভোগ করে। কিন্তু সমস্ত দ্রব্য হিসেবে মধ্য আনা সম্ভব নয়। তাই এমন কতগুলো দ্রব্য নির্বাচন করতে হবে যেগুলো সমাজের অধিকাংশ মানুষ ভোগ করে।

৪) দ্রব্যের দাম নির্বাচন :- দ্রব্য সামগ্রী নির্বাচনের পর নির্বাচিত দ্রব্যসমূহের দাম সংগ্রহ করতে হবে। দাম সংগ্রহের ক্ষেত্রে নির্বাচিত দ্রব্যসমূহের এর পাইকারি দাম ধরতে হবে। এক্ষেত্রে ভিত্তি বছর এবং হিসাবি বছরের নির্বাচিত দ্রব্য গুলোর পাইকারি দাম সংগ্রহ করে একটি তালিকা তৈরি করতে হবে।


Read More :- কৃষি ঋণ এবং এর উৎসসমূহ।


৫) দ্রব্যের দাম শতকরা হিসাবে প্রকাশ :- ভিত্তি বছরের নির্বাচিত দ্রব্য গুলোর প্রত্যেকটির দামকে ১০০ হিসেবে ধরতে হবে। তারপর হিসাবি বছরে পূর্বোক্ত দ্রব্যসমূহের দাম উল্লেখপূর্বক ভিত্তি বছরের তুলনায় প্রত্যেকটির দাম শতকরা কত পরিবর্তিত হয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে।

৬) গড় দাম নির্বাচন :- এই পর্যায়ে ভিত্তি বছর ও হিসেবে বছর উভয় বছরের দ্রব্যাদি দামের গড় বের করতে হবে। উভয় বছরের দ্রব্যমূল্যের যোগফল বের করে তাকে দ্রব্যসংখ্যা দ্বারা ভাগ করতে হবে। ভিত্তি বছরের গড় পড়তা দামেস্তর অপেক্ষায় যদি হিসাবি বছরে দামস্তর বাড়ে তাহলে অর্থের মূল্য কম হবে। আবার, ভিত্তি বছরের গড় পড়তা দামস্তর অপেক্ষা যদি হিসেবে বছরের দামস্তর কমে তাহলে অর্থের মূল্য বৃদ্ধি পাবে।


মুদ্রাস্ফীতি


মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ পদ্ধতি, মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ করা যেকোনো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রাস্ফীতি দ্রব্যমূল্যে পরিবর্তনের হার প্রকাশ করে। তাই মূল্য সূচকের সাহায্যে মুদ্রাস্ফীতির হার পরিমাপ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রধানত তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

১) ভোক্তার মূল্য সূচক (Consumers Price Index - CPI)

2) উৎপাদকের মূল্য সূচক (Producers Price Index - PPI)

৩) অব্যক্ত অবমূল্যায়ন সূচক (Implicit Price Deflator - IPD)

উপরের তথ্যগুলো থেকে আমরা জানতে পারলাম যে মুদ্রাস্ফীতির বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ। সংখ্যা সূচক কিভাবে পরিমাপ করা হয় ও সংখ্যা সূচক পরিমাপের পদ্ধতি এবং মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপের পদ্ধতি।

Post a Comment

0 Comments